সময়টা আজ থেকে ঠিক ১৭ বছর আগে। আমার ছোট কাকা কাপড়ে ব্যবসা করতো। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে দোকানে যেতো কাকা। আমি প্রায়ই বায়না ধরে কাকার সাথে সাইকেলের পিছনে চড়ে ঘুরে বেড়াতাম। আহা! গ্রামের মেঠো পথে সাইকেলে চলার সেই অনুভূতিগুলো এখনো মনের গহীনে আলোকিত করে। শীতে কুয়াশা মাখা সকালে সাইকেলে যখন উঠতাম ঠান্ডায় হাত জমে যেতো। তার মধ্যে সাইকেল যখন চলা শুরু হতো তখন হুহু করে বাতাস বয়ে যেতো।
ছেলেবেলার সময়গুলো সত্যি অসাধারণ ছিলো। তখন সাইকেল চালাতে খুব একটা ইচ্ছা করত না। সাইকেল চালাতে কখনো চেষ্টা করে দেখেনি। কেননা কাকার সাইকেলটা আমার থেকে বিশাল বড় সাইজের। খুব ইচ্ছা করত বাবাকে বলতে একটা সাইকেল কিনে দিতে। কিন্তু সাহস হতো না। পুরো পরিবারের ভরণপোষন করে আমাকে সাইকেল কিনে দেয়ার মত বিলাসী করার মত অর্থ সেই সময়টা ছিলো না। রাতের পর রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতাম নীল রংয়ের ছোট একটি সাইকেল আমি চালাচ্ছি। স্বপ্নটা এতটা বাস্তব মনে হতো যে ঘুম থেকে উঠার পর কিছু সময় ঘোরের মধ্যে থাকতাম। বুঝতে কষ্ট হতো আমি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তবে আছি।
সময় চলতে থাকলো তার নিজস্ব গতিতে। সাইকেল নামক বস্তুটা ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেলো। ২০১২ সালের দিকে চোখে পড়লো বিডিসাইকেলিস্ট নামক ফেইসবুক গ্রুপ। সাইকেল নিয়ে সবার পোষ্ট দেখে ছেলেবেলার স্বপ্নটা আবার জেগে উঠলো।
কিন্তু আমি তো সাইকেল চালাতে পারি না। সাইকেল কিনে চালাবো কিভাবে। সাইকেল কেনার আগে সাইকেল চালানো শেখার জন্য নানা চেষ্টা করতে থাকতাম। অবশেষে বন্ধু আরিফের সাইকেল দিয়ে দুইদিনের মাথায় শিখে গেলাম সাইকেল।তারপর কিনলাম আমার প্রথম সাইকেল সেটা নিয়ে লিখে এখানে।
এবার আসি কেন আমি সাইকেল চালাই সেই বিষয়গুলো নিয়ে।
সময় বাঁচানো:
ঢাকা শহরের বর্তমানের সময়ের যাতায়াত করা কতটা কষ্টের আর যন্ত্রণাময় এটা শুধু মাত্র ঢাকাবাসী জানে। দূর থেকে দেখা গেলেই এই কষ্টটা কতটুকু তা কেউ অনুভূব করতে পারবে না। রাস্তার বসে বসে জ্যামের মধ্যে যে পরিমার সময় নষ্ট হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন জ্যামেরা কারণে ২+ ঘন্টা নষ্ট হয় অফিস যাত্রীদের। আমারও তাই হয়। তারপর বাসা পাওয়া যায় না। ভীড় সামলে গাড়িতে উঠা যেন রীতিমত আরেক যুদ্ধ। এই সকল ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই সাইকেল চালাই। সময়টা বেঁচে যায়।
টাকা বাঁচানো:
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিস পত্রের দাম। কিন্তু সেই অনুযায়ী টাকার অংকের পরিমান বাড়ছে না।রিকশা ভাড়া বেড়েছে দুইগুন করে।এখন তো ২০ টাকা ছাড়া রিকশায় উঠাই যায় না। সাইকেলের কারনে রিকশা খরচ এবং গাড়ি ও সিএনজির খরচ বেঁচে যায়। আর সাইকেলের তেল খরচ নেই বাইকে মত। ফলে অনাসয়ের ব্যবহার করা যায় J মাঝে মাঝে শুধু পাম্প দিলেই হয় 😀
ব্যায়াম:
আমরা ছেলেবেলা পড়েছি স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু এই স্বাস্থকে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করে খুবই কম। আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই করুন। সাইকেল চালালে আরও চিকন হয়ে যায় নাকি মানুষ (অনেকে বলে)। তবে সাইকেল চালানো সময় পায়ের ব্যায়ামগুলো হয়ে যায়। কাজের চাপে জীমে গিয়ে ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ব্যায়ামের কাজটি সাইকেল করে দেয়।
খাবারের রুচি:
খাওয়ার ব্যাপারে আমি যথেষ্ট উদাসীন। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করি না। এখনো এই বয়সে এসে আম্মা খাইয়ে দেয়া আমাকে। এই আর্টিকেলটা লেখার আগে আম্মা নিজ হাতে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়েছে আমাকে। আহা! মায়ের হাতে খাওয়ার মজাই অন্য রকম।
যাদের খাওয়ার রুচি নেই কিংবা খেতে অনীহা তাদের বলব দুইঘন্টা টানা সাইকেল চালিয়ে আসুন। দেখবেন খাওয়ার রুচি চলে আসবে J আমার তাই হয়। সেদিন সাইকেল চালাই সেদিন খাওয়ার পরিমান ডবল হয়ে যায়।
রাস্তার রাজা:
আপনার কাছে একটা সাইকেল থাকলে আপনি রাস্তার রাজা হয়ে যাবেন। জ্যামের মাজে যখন প্রাইভেটকার গুলো দাড়িয়ে থাকে তখন সাইকেল পাঠিয়ে পাশ দিয়ে বেশ আরামেই যাওয়া যায়। যদি তাও না যাওয়া যায় তাহলে ফুটপাত দিয়ে সাইকেল নিয়ে অনাসয়ে হেটে জ্যাম পার হওয়া যায়। একটা সাইকেল থাকলে সিএনজি, রিকশা কিংবা বাসের হেল্পারদের পিছে ছুটতে হয় না। আপনার পথের রাজা আপনিই।
এবার ৫-৬ মাস আগে আমার কেনা দ্বিতীয় সাইকেলের ছবি দেখুন।
সাইকেল নিয়ে নিয়মিত কয়েকটি আর্টিকেল লিখব চিন্তা করেছি। সময় সুযোগমত লিখে ফেলব। মন্তব্যে আপনি জানিয়ে দেন কেন সাইকেল আপনার পছন্দ? যদি সাইকেল পছন্দ না হয় সেটার কারণও জানাতে পারেন। সাইকেল পরবর্তীতে পর্বে সাইকেলের নানা অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে তুলে ধরব।
পিংব্যাকঃ ডাক্তার বনাম স্মার্টফোন অতপর সাইকেল | তুসিনের জল-জোছনা
পিংব্যাকঃ ডাক্তার বনাম স্মার্টফোন অতপর সাইকেল – জল-জোছনা