ইনাদিং বাবা বেশ মন খারাপ করা কথা বলে হঠাৎ করে। সারাদিন হাসিখুশি থাকে কিন্তু হঠাৎ করেই কি যেন হয় বাবা। মন খারাপ স্বরে বলে উঠে, আর কয়দিনই বা বাচঁব। আল্লাহ সব কিছু যেন গুছিয়ে দিয়ে যেতে পারি।
আমার কম্পিউটারের টেবিল বাবার রুমের পাশেই। টেবিল থেকে বাবা যে সোফায় বসে টিভি দেখে তা দেখা যায়। বাবা কি বলে না বলে সবই শোনা যায়। বাবার এই ধরনের হতাশার কথাগুলো শুনে পরক্ষণে চোখে জল আসতে চায়। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। কেন এই পৃথীবিতে আমরা অল্প কয়টা দিন বাঁচি? অল্প কয়টা দিন বেচেঁ থাকি বলেই কি পৃথীবি এত সুন্দর মনে হয়? এই মায়াময় পৃথীবে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না আমাদের।
আজ হঠাৎ করে দুই বছর আগে ঘটনাগুলো মনে পড়ছে। যখন আমার হাতে ডাক্তার রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, আমার বাবার ক্যান্সার। বেশিদিন তিনি বাঁচবেন না। অপারেশন করাতে হবে। জটিল অপারেশন।
সেদিন পাগলের মত হাসপাতাল টু হাসপাতাল দৌড়ে ছিলাম আমি আর ভাইয়া। হাতে বাবা ক্যান্সারের রিপোর্ট। একটা সিএনজিতে উঠে এই হাসপাতাল ঔ হাসপাতাল। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। যেন ক্যান্সারের ভাইরাস দ্রুত সরিয়ে না যায়। তবুও মনে ভিতর ক্ষীন আশা হয়ত কোন একজন ডাক্তার বলবে, আপনার বাবার ক্যান্সার হয়নি। ভুল রিপোট এসেছে।
কিন্তু না কেউ বলে নি। সব ডাক্তার বলেছে দ্রুত অপারেশন করাতে হবে।

নতুন বছরের শুরুটা সত্যি আনন্দের। বাবা এখনো আমাদের মাঝে আছেন এটাই চমৎকার আনন্দের। গত বছর হারানোর তালিকাটা অনেক বড়।
ভয়ংকর মন খারাপ বা আত্নবিশ্বাস হারিয়ে গেলে আমি বাবাকে দেখি। বাবাকে দেখলে উৎসাহ পাই। ক্যান্সার নামক ভয়ংকর একটি রোগের সাথে তিনি যুদ্ধ করে যাচ্ছেন দুই বছর ধরে। এখনো তিনি ভোরে উঠে ফযরের নামাজ পড়েন, হাঁটতে যান, বাজার করেন, ছয় তলা থেকে নেমে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। বাসায় কেউ আসলে চমৎকার ভাবে হাঁসিখুশি মনে গল্প করে। গুরু গম্ভীর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন। মাঝে মাঝে আমাকে বকা দেয়। আত্নবিশ্বাস সত্যি বেশ প্রয়োজন এই ছোট জীবনটাতে বাঁচতে হলে। হঠাৎ হঠাৎ মনে হবে দূর ছাই আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আত্নবিশ্বাস ফিরে পেতে এক এক জনের উপাদান এক একটা। কোন উপাদান বেশিদিন থাকে না। বস্তুবাচক বিষয়গুলো তো নয়ই। তবে হ্যা আত্নবিশ্বাস ফিরে পেতে বই চমৎকার একটি মাধ্যম। সেই সাথে নামাজ।
আপনি হতাশ? চমৎকার একটা বই পড়েন। আপনার বেঁচে থাকলে ভালো লাগছে না? এক ঘন্টার জন্য কবরস্থানে ঘুরে আসুন। দেখবেন জীবনটা অন্যরকম লাগবে।