অলস দুপুর, সূর্যের তাপের কারনে গরম প্রচন্ড। তবে দক্ষিনা বাতাস কিছুক্ষন পর পর ঠান্ডা বাতাস দিয়ে শীতল রাখার চেষ্টা করছে পরিবেশ। যমুনার একটি শাখা নদীর পাশেই গাছের নিচে চেয়ারে বসে আছে ১৫-২০ জন তরুন। অনেকেই হাতে ডাব, তৃপ্তি করে খাচ্ছে। এই গরমে ডাবের পানি, দক্ষিনা বাতাস, নদী, গাছের ছায়া সব মিলে এক অপূর্ব পরিবশ। গরম দুপুরটি যেন অন্যরকম চমৎকার একটি দুপুরে রুপ নিলো।
বলছি হঠাৎ প্ল্যান করে নাটোরে ঘুরেতে আসা চমৎকার একটি দুপুরের কথা। এক ঝাঁক স্বপ্নময়ী, হাসিখুশি মানুষের সাথে ট্যুরটা বেশ উপভোগ ছিলো। একটু পেছনের গল্পে যাই।
শবে বরাত রাতে ঘুমাতে পারেনি। মাত্র এক ঘন্টার মত ঘুম হয়েছে। সকালে ৭টার মধ্যে চলে গেলাম অ্যাপবাজারের অফিসের সামনে। আরাফাত ভাইয়ের সাথে দেখে। তারপর বিপ্লব ভাই আসলো। হ্যা বিপ্লব ভাই সম্পর্কে একটু পরিচয় করিয়ে দেই।
বিপ্লব ভাই আমার দেখা হাসিখুশি, উৎসাহী, ভিন্নভাবে চিন্তা করে এরুপ মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রচন্ড প্রেসারের মধ্যেও কিভাবে হাসিখুশি থাকতে হয় এই মানুষটিকে দেখলে বুঝা যায়। কাজ পাগল হাসিখুশি এই মানুষটি পরের দিন ভারত যাবে সন্তানের চিকিৎসা করতে। তবুও এই ট্যুর প্ল্যান বালিত করেনি। চোখে মুখে চিন্তা ছাপ নেই, হাসিখুশি, আড্ডা মাতিয়ে শেষ করলো ঝটিকা নাটোর ট্যুর। বিপ্লব ভাই সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানান আছে। টেকশহর ডটকমে এই ইন্টারভিউটা পড়লেই বুঝা যাবে।
বিপ্লবভাই, আরাফাত ভাই, আমি একত্রে সকালের নাস্তা করলাম। তারপর এলো অ্যাপবাজারের টিম। ফল উৎসব ট্যুরের যখন প্ল্যান হচ্ছিল ফেইসবুকে, তখন অনেকই বলেছিলো আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই এলো না। যারা এলো সবাইকে নিয়ে গাড়ি ছাড়লো সকাল ৮টার দিকে।
তিনটি গাড়ি ছেড়ে যায় নাটোরের উদ্দেশ্য। একটি প্রাইভেট কার, দুইটি মাইক্রো বাস। সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে মোট দশজন উঠে। আমার পাশে বসল এক সময়ের সাংবাদিক, লেখক এবং নারীদের হৃদয়ে ঝড় তোলা আরজে সাকিব ভাই। অপর পাশে বললো টেকশহরের রাইটার, অ্যাপবাজারে টিম লিড এবং অ্যাপ ডেভেলপার রুবেল ভাই।
গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে গাড়িতে গান বেজে উঠলো। কিন্তু এমন সব অদ্ভূত গান বাজা শুরু হলো তা শুনে সবাই বিরক্ত হলো। একটা সময় আমরা নিজেরা গান গাওয়া শুরু করলাম। রুবেল ভাই শুরু করলো “ ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি। সাথে আমরা সবাই সুর মিলানো শুরু করলাম।
একে একে করে আমরা ৪-৫টি গান একত্রে খাইলাম। গানের পর্বে শেষ করতেই শুরু হলো জোকস বলার প্রতিযোগিতা। সাকিব ভাই ঘোষণা দিয়ে দিলো, যে ভালো জোকস বলতে পারবে তার জন্য রয়েছে চকলেট। রুবেল ভাই চকলেট খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে শুরু করলো জোকস বলা। তারপর জিতে নিলো চকলেট।
একে একে সবাই জোকস বলল। জোকসগুলো শুনার পর আমরা সবাই চিনি খাওয়া, ট্রাক ও স্কুটার চালনো, শয়তান মারা ইত্যাদি বিষয়ে পিএইচিডি অর্জন করে ফেলি। এই জোকসগুলো কি ছিলো? থাক না বলি। থাক না কিছু রহস্য।
আনলিমিটেড আড্ডা দিতে দিতে কখন যে ৬ ঘন্টা পার হলে গেলো আমি টের পেলাম না। ১.৩০ এর দিকে আমরা পৌছলাম নাটোরের উত্তরা গনভবন। সবাই মিলে সেই গনভবন ঘুরে দেখলাম। সবাই আগেভাগে গাড়িতে পৌছে গেলেও আমি, সাকিব ভাই এবং রাসেল ভাই ভবনটি আরও ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
তারপর আমরা পৌছলাম রবিন ভাইয়ের বাড়িতে। গাড়ি সেখানে থামল আমরা দেখতে পেলাম ডেকোরেশন করা একটা জায়গা। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা মনে হয় কোন বিয়ে বাড়ি। কিন্তু পরক্ষনে আমাদের অবাক হতে হলো, এত সব আয়োজন আমাদের জন্য। পুরাই বুফে স্টাইল।
খাবারের মেনু’তে যা ছিলো তা দেখে রীতিমত চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এতে আয়োজন অকল্পনীয়। মেনুগুলো একটু বলছি, সাদাভাত, মুরগি রোস্ট, গরু,ডাল, কাবাব, কাঁচাগোল্লা, মিষ্টি, দই, তরমুজ, জামরুল, পেয়ারা, আম, নারিকেল, তালের ডাব, কেক। খেতে খেতে আমাদের সবার অবস্থা খারাপ।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে নদীরপাড়ে বসে নারিকেল খেলো সবাই। সেটার কথা লেখার শুরুতে বলেছি। চমৎকার পরিবেশ।
তারপর দলগতভাবে সবাই মিলে লিচু গাছ থেকে পেড়ে লিচু খাওয়া হলো। আমার জীবনে প্রথম এত এত লিচুর গাছ দেখলাম এবং গাছ থেকে পেরে লিচু খেলাম।আনলিমিটেড লিচু খাওয়া।
লিচু খাওয়ার পর শুরু হলো ক্রিকেট খেলা। খেলায় আমার দল বিশাল ব্যবধানে হারলাম। আমাদের দলের রুবেল ভাইয়ের পা কেটে যায় ব্যাটিং করতে গিয়ে। খেলে শেষ কেক কাটা, আম খাওয়া, পান খাওয়া শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা।
সর্বশেষ বলা যায়, চমৎকার একটা ভ্রমন ছিলো এটি।
এক নজরে ট্যুরটির ভিডিও: