প্রচন্ড ভয় করছে মৃত্যু নিয়ে।মানুষকে মারা যেতে হবে একটা স্বাভাবিক ।জম্ম যখন হয়েছে তখন মারা যেতে হবে এটাই জগতের নিয়ম।আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে।ব্যাপারটা খুব সাধারন।আমি জানি এই নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আমারা মৃত্যু থেকে নিজেদের পরিতান দিতে পারব না।কিন্তু আজ হঠাৎ করে আমাকে মৃত্যু চিন্তা গভীরভাবে আসক্ত করছে।দু’চোখ বন্ধ করে বারান্দায় বসে আছি।আমি মারা যাওয়ার পর কি হবে?মারা যাওয়ার পর সবার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?মারা যাওয়ার পর কি সবাই কান্না-কাটি করবে??মারা যাওয়ার কতদিন পযন্ত আমাকে মনে রাখবে?? এই সব হাবিযাবি চিন্তা…..!!!
আমি মারা গেছি।সাদা কাপড়ে আমাকে ঢেকে রাখা হয়েছে।চারপাশে কয়েকজন কুরআন তেলোয়াত করছে।পাশের রুম থেকে কান্না আওয়াজ আসছে।একটু উকি মারলাম।দেখি আম্মা অঝরে কাঁদছে।পাশে আপু,ভাইয়া, আন্টি……বসে আছে।সবার চোখে পানি।আম্মাকে সবাই কান্না থাকতে চেষ্টা করছে।কিন্তু কান্না কিছুতেই থামছে না।যত থামানো চেষ্টা করছে ততো আবেগী হয়ে কাঁদছে। দেখে মনে হচ্ছে আম্মার কলিজা ফেটে রক্ত ঝরছে।চোখের প্রতিটি পানি যেন তীব্র হয়ে পড়ছে।এটি ভাষায় বলে বনর্ণা দেয়া যাবে না।শুধু মাএ যারা এই ব্যাপারটা ফিল করতে তারা বুঝতে পারবে।কি তীব্র কষ্ট হয় তখন।একটা সময় আম্মা মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল।সবাই আম্মার মাথায় পানি ঢালায় ব্যাস্ত।
আমি এবার অন্য দিকে নজর দিলাম।ছাদে গেলাম।দেখি অনেক চেয়ার ছাদে ।কয়েকজন বসে আছে।তাদেরকে আমি চিনি না।একজন দুইজনকে চিনি।একজন মানুষ দেখতে পেলাম দেওয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদছে।চেহারা দেখতে পাচ্ছি না।একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম।গিয়ে দেখি এই মানুষটি আমার বাবা।বাবা একটা ফতুয়া পড়ে আছে।যেটা আমি টিউশনি টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছিলাম।বাবা খুব খুশি হয়েছিল ফতুয়াটি পেয়ে।ফতুয়াটির কিছু অংশ পানিতে ভিজে আছে।আমার বুঝতে বাকি রইল না এগুলো চোখের পানি।বাবা ছোট বাচ্চাদের মত নি:শব্দে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।আমি তাকিয়ে আছি বাবা দিকে।কতই না কষ্ট হচ্ছে মানুষটার।তীব্রভাবে বাবা চেষ্টা করছে কান্না থামাতে কিন্তু পারছে না।কেউ যেন না দেখে ফেলে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করছে।বাবারা মনে হয় এমনই হয় তাই না।নিজেরা যেমন লুকিয়ে লুকিয়ে সন্তানদের ভালবাসে।কখনো সেই ভালবাসা প্রকাশ করে না ।ঠিক তেমন করে লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করছে।
ছাদ থেকে এবার রুমে আসলাম।আমার নিথর দেহ পড়ে আছে।চারপাশে পরিবেশটা কেমন অদ্ভূত মনে হচ্ছে।কান্নার শব্দে ভারি হয়ে আছে চারপাশ।আমি চুপচাপ আমার নিথর দেহের পাশে বসে রইলাম।
কিছুক্ষন দেখলাম আমার বন্ধুরা আসতে শুরু করল।সবার প্রচন্ড মন খারাপ।সবাই এসাথে মন খারাপ করে বসে আছে।কাউও চোখের কোনায় বিন্দু বিন্দু জল।
আচ্ছা অশ্রুদর্শনীর কি খরব??ও কি আমার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছে?কত না কষ্ট পেয়েছ ও তাই না?আমাদের রঙ্গিন স্বপ্নগুলো,উড়ে বেড়ানো স্বপ্ন ,ডানা ছাড়া পাখি হওয়ার স্বপ্ন,নীল আর হলুদ পান্জাবী পড়ে টিএসসিতে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন…….নতুন করে বেঁচে উঠার স্বপ্ন….।ওর ছোট জগতটা জুড়ে যে স্বপ্ন ছিল তা আজ শেষ হয়ে গেল।ও কি পারবে সোজা হয়ে উঠে দাড়িয়ে আবার নতুন করে বাঁচতে?
চারপাশে মানুষের কান্না দেখে আমার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।বুকের ভেতরে প্রচন্ড হাহাকার করে উঠল।কিন্তু কান্না আসছে না আমার।চোখে যেন শোক পাথর হয়ে গেছে।
বারান্দার বসে চেয়ারে কখন যে আমি ঘুমের দেশে চলে গেলাম তা মনে করতে পারব না।ঘুম হয়নি।ধূসর ঘুম যাকে বলে।এই ঘুম এই জেগে থাকা।
প্রচন্ড ভয়ে পেতে থাকি।এই পৃথীতে এসেছে।পৃথীবির জন্য কত কিছু করছি।কিন্ত পরকালের জন্য কি আসলে কিছু করছি?নামাজটাও অলসতার কারনে সঠিক টাইমে অনেক সময় পড়ি না।মাঝে মাঝে নানা কারনে নামাজ মিস করি।অথচ একটু সময় করে নামাজটা পড়লে খুব বেশি কষ্ট হয় না।কিন্তু সেই কষ্টটা আমি করতে নারাজ……মাঝে মাঝে কষ্ট হবে এই কথা চিন্তা করে নামাজ মিস করে।অনেক টায়ার্ড তাই নামাজ পড়ি না।এখন থেকে “অবশ্যই” পড়ব ঠিক ভাবে পড়ার।তাদের বলছি যারা আমার নামাজ মিস করেন “একটু কষ্ট করে কিন্তু নামাজটা পড়া যায়।কিন্তু অলসতা আমাদের এমন ভাবে আকঁড়ে ধরে আমরা ছুটতে পারি না।যদি তীব্র ইচ্ছা থাকে তাহলেই পারা যায়।কাল থেকে নামাজ পড়ব।কাল হলে আবার বলি আগামী সপ্তাহ থেকে।কিন্তু আসলে আর করা হয় না।তাই নামাজ শুরু করতে হবে এখন থেকে,এই ওয়াক্ত থেকে।“
দেশের অবস্থা নিয়ে সত্যি চরম হতাশ আমি।h.s.c পরীক্ষার্থদের অবস্থা শোচনীয়।দুইটা পরীক্ষা পিছানো হয়েছে হরতালের কারনে।এই পরীক্ষা কবে শেষ হবে কি জানি!!যে হারে হরতাল দিচ্ছে।আমার সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা এই মাসের দশ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল তা এখনো শেষ হয় নি।আল্লাহ যেন আমাদের দেশকে শান্ত করে দেয় এই কামনা করি।
সুমন্ত আসলামের একটি ফেবু স্ট্যাটাস দিয়ে শেষ করি,
“আমি আমার আঙ্গুল আরো কঠিন করে বলতে চাই–দেশটা আমার, আমাদের। কারও কাছে ইজারা দেইনি এটা, কারও কাছে দাসখতও দেইনি যে, এ দেশ নিয়ে যার যা ইচ্ছা তাই করবে এবং তাদের ইচ্ছার বলি হবো আমরা! শান্তি চাই আমরা। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত।
নদী শুকিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন, আমরা সেই শুকনো নদীর পাড়ে বসেই হাওয়ায় ভাসাতে চাই শরীর। আমাদের গাছ কমে যাচ্ছে, তবুও যে কয়টা আছে, তার ছায়ায় শীতল করতে চাই প্রাণ। আমাদের পাখিরা বাসা বাঁধার জায়গা পায় না বলে তারা বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তবুও যে কয়টা আছে, তার ডাক শুনে শান্ত করতে চাই মন।
আমাদের বাঁচতে দিন, আমরা সাধারণেরা বাঁচতে চাই। নইলে…।“
আমি কিন্তু লেখা বন্ধ করিনি। শুধু নতুন ব্লগ শুরু করেছি। – http://walkingalongway.wordpress.com/
আমি ভেবে ছিলাম আপনি হারিয়ে গেছে 😦 অনেক ভাল লাগলে ।নতুন করে স্বাগতম। নতুন ব্লগের লিংকটি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ…